সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াই বড় হওয়া সম্ভব—শুধু চেষ্টা থাকতে হবে

admin

admin

সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াই বড় হওয়া সম্ভব—শুধু চেষ্টা থাকতে হবে

একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াই বড় হওয়া সম্ভব—শুধু চেষ্টা থাকতে হবে

বাস্তব অনুপ্রেরণার গল্প: ডা. হ্যামিল্টন নাকি, একজন নিরক্ষর ‘মাস্টার অব মেডিসিন’ সার্জন


ডা. হ্যামিল্টন নাকি-র বাস্তব গল্প জানুন। কোনো একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াই কিভাবে তিনি মালি থেকে সার্জন হয়ে উঠলেন এবং বিশ্বখ্যাত “মাস্টার অব মেডিসিন” ডিগ্রি অর্জন করলেন।

 ডা. হ্যামিল্টন নাকি, একাডেমিক শিক্ষা ছাড়া সফলতা, মাস্টার অব মেডিসিন, অনুপ্রেরণার গল্প, সফল হওয়ার উপায়


ডা. হ্যামিল্টন নাকি: একজন নিরক্ষর ‘মাস্টার অব মেডিসিন’ সার্জন

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

ডা. হ্যামিল্টন নাকি ১৯২৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের একটি দরিদ্র গ্রাম সেন্টানি-তে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা পশুপালক ছিলেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবার অসুস্থতা ও আর্থিক সংকটের কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।


মালী থেকে সার্জনের পথে

প্রথম জীবনে তিনি রাজমিস্ত্রির সহকারী এবং পরে টেনিস কোর্টের মালি হিসেবে কাজ করেন।
১৯৪০ সালে কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি মালি হিসেবে নিয়োগ পান। এভাবেই তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়।


জীবনের পরিবর্তন: ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে অপারেশন থিয়েটার

একবার জরুরি এক অপারেশনে জিরাফকে অজ্ঞান অবস্থায় স্থির রাখতে গিয়ে তিনি ৮ ঘণ্টা ধরে সহায়তা করেছিলেন। তার নিষ্ঠা দেখে তাকে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

সেখান থেকে শুরু হয় তার নতুন যাত্রা। তিনি প্রাণীদের ওপর ছোট-বড় অপারেশন শিখে ফেলেন—খরগোশ, শূকর, কুকুর এমনকি জিরাফের ওপরে অস্ত্রোপচারে দক্ষ হয়ে ওঠেন। পরে তিনি করোনারি বাইপাস, হার্ট এবং লিভার প্রতিস্থাপনে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন।


বিশ্বমঞ্চে সম্মান: “মাস্টার অব মেডিসিন”

আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াই চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদানের জন্য ২০০৩ সালে কেপটাউন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক “মাস্টার অব মেডিসিন” ডিগ্রি প্রদান করে।

তৎকালীন অধ্যাপক ডা. ডেভিড ডেট বলেন:

“হ্যামিল্টন শুধুমাত্র একজন শিক্ষক নন, বরং একজন অসাধারণ সার্জন এবং হৃদয়বান মানুষ।”


গুরুত্বপূর্ণ অবদান

  • ১৯৬৭ সালে বিশ্বের প্রথম মানব হৃদয় প্রতিস্থাপন অপারেশনে ডা. ক্রিশ্চিয়ান বার্নার্ডের সহযোগী ছিলেন।

  • লিভার প্রতিস্থাপনের সময় একটি বিশেষ ধমনী আবিষ্কার করেছিলেন, যা চিকিৎসা পদ্ধতিকে সহজ করে দেয়।

  • তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০২ সালে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ সম্মান ‘ব্রোঞ্জ অর্ডার অব মাপুনগুবওয়’ প্রদান করা হয়।


শেষ জীবন ও মৃত্যু

অবসরের পর তিনি একটি ছোট ঘরে বিদ্যুৎ ও পানি ছাড়াই বসবাস করতেন। প্রতিদিন ১৪ মাইল হেঁটে কর্মস্থলে যেতেন।
২০০৫ সালে কেপটাউনের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মৃত্যুবরণ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়েই তাকে সমাহিত করা হয়—যা একটি বিরল সম্মান।

এক নজরে

  • নাম: হ্যামিল্টন নাকি

  • জন্ম: আনুমানিক ১৯২৬, কেপ প্রদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা

  • পেশা: ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট → সার্জারি-টিমের মূল কারিগর

  • স্বীকৃতি: সম্মানসূচক Master of Medicine (২০০৩), Order of Mapungubwe (Bronze) (২০০২)

  • মৃত্যু: ২০০৫, কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাহিত


কেন এই গল্প গুরুত্বপূর্ণ

ডিগ্রি নেই। সুযোগও কম। তবু তিনি থামেননি। অধ্যবসায় এবং নিষ্ঠা দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। এই গল্প শেখায়—চেষ্টা থাকলে পথ তৈরি হয়।

অনুপ্রেরণার শিক্ষা

ডা. হ্যামিল্টন নাকি প্রমাণ করেছেন—
👉 ডিগ্রি নয়, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ই মানুষকে বড় করে।
👉 একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াই সফল হওয়া সম্ভব—যদি চেষ্টা থাকে।

একজন মালি থেকে সার্জন হয়ে বিশ্বে অনন্য সম্মান অর্জন করা—এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।


🔖 লেখাটি আশরাফুলের সংগ্রহে তৈরি। এটি কেউ কপি করবেন না, শুধু শেয়ার করার অনুমতি আছে।